শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post
তালার টিআরএম প্রকল্প 

শেষ হলেও পরিশোধ হয়নি কৃষকের ক্ষতিপূরণের টাকা 

তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি  

শেষ হলেও পরিশোধ হয়নি কৃষকের ক্ষতিপূরণের টাকা 

সাতক্ষীরা তালা উপজেলায় ২ হাজার ৬০ জন কৃষকের জমি ছিলো উপজেলার পাখিমারা বিলে বাস্তবায়িত টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্পের মধ্যে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী প্রকল্পে প্রথম দুই বছরের জন্য ১ বিঘা জমির জন্য বিঘা প্রতি ১৪ হাজার ৩৩৮ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন।

কিন্তু বিপত্তি বাধে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছ থেকে ২ বছরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করলেও টিআরএম দীর্ঘ ৬ বছর চালু ছিলো। এ দীর্ঘ সময়ে কৃষকরা তাদের জমিও ফিরে পাননি অন্যদিকে তাদের জমির ক্ষতি পূরণের টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। এভাবে টিআরএম প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ হাজার ৬০ জন কৃষক তাদের নায্য টাকা পায়নি।

তালার তেঘরিয়া গ্রামের অমরেন্দ্র পালের ৬ বিঘা জমি ছিলো টিআরএম প্রকল্পের মধ্যে। প্রকল্পে প্রথম দুই বছরে জন্য ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কৃষক অমরেন্দ্র পাল জানান, বিভিন্ন সময় পাওনা টাকা আদায়ের জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের দ্বারে  দ্বারে ঘুরলেও সরকারের পক্ষ থেকে টাকা দেয়ার আশ্বাস পর্যন্ত দেয়া হয়নি।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানি কমিটি ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কপোতাক্ষ অববাহিকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমাস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে গত ২০১১-১২ অর্থবছরে পাখিমারা বিলের চারিপাশে ১২.৮৭ কিমি. পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ শুরু করে এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা শেষ করে। 

ভূমি অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বাস দিয়ে ২০১১ সালের পরিবর্তে ২০১৫ সালে টিআরএম প্রকল্প চালু করে। যথারীতি নদী খনন ও টিআরএম চালু হলেও ২০১১-২০১২ ও ১২-১৩ সালের ২ বছরের ক্ষতিপূরণের টাকা ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ সালের ২ বছরের হিসাব ধরে ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের প্রদান করা হয়। 

১ম প্রকল্প শেষ হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে এবং ২য় পর্যয়ের প্রকল্প ২০২০-২১ হতে ২০২৩-২৪ নির্ধারণ করা হয়। ২য় প্রকল্পে জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা। অথচ ২০১৩ সাল হতে অদ্যাবধি ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে বাকী অধিগ্রহণকৃত ক্ষতিপূরণের বকেয়া টাকা প্রদান করা হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক রবিউল ইসলাম মুক্তি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা অত্যন্ত দুরাবস্থায় আছি। নিজেদের জমি থাকা সত্বেও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার ফলে মানবেতর দিন কাটাচ্ছি। বাধ্য হয়ে ২ হাজার ৪৭ জন কৃষক গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছি। গণস্বাক্ষরের কপি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পাওনা টাকা পাবো।

টিআরএম প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ে কাজ করা পানি কমিটির নেতা মীর জিল্লুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডর অবহেলায় পেরিফেরিয়াল বাঁধ তৈরির বরাদ্দ না রেখেই প্রকল্প ডিজাইন করা হয়। কিন্তু কৃষকদের দাবি পেরিফেরিয়াল বাঁধ তৈরি আগে ফসলের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে বাঁধ তৈরি করতে দেবে না।

বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের দাবিকেই অযুহাত তৈরি করে টিআরএম অচল করে রেখে ২ হাজার ৬০ জন কৃষকের বকেয়া টাকা আটকে রেখেছে। এতে কৃষকদের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।  

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. কে. এম. মমিনুল ইসলাম জানান, রেভিনিউ খাতে টাকা ধরা আছে। কৃষকরা ডিসি অফিস থেকে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবে।

টিএইচ